শিশুর যত্ন

সন্তান গড়ার জন্য পরিবেশ তৈরীর গুরুত্ত

সন্তান গড়ার জন্য পরিবেশ
সন্তান গড়ার জন্য পরিবেশ

সন্তান স্কুলে দিব না মাদ্রাসায়? তারপর ইংলিশ মিডিয়াম না বাংলা মিডিয়াম।
পিতামাতার চিন্তার কোন শেষ নেই। কারণ সবাই চায় তাদের সন্তান একাডেমিক পড়াশুনায় ভাল হউক।
আবার অনেকেই চান ইহকালের সাথে পরকালের জন্যও তৈরী করতে।
আবার অনেকেই অনেক ভাবনা চিন্তার মাঝে নিজেকে হতাশায় ফেলে দেন।
আমার মনে হয় খুব মানুষ আছেন যারা সন্তানের মানুষিক অবস্থার কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন।
অতটুকু বাচ্চার আবার মানুষিক অবস্থা কি ?
সেই বিষয় নিয়েই লিখব।

কারণ সাদিক বড় হচ্ছে। সেও কিছুদিন পর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইনশাল্লাহ যাবে।
তাই আমার চিন্তা আর প্রস্তুতি সম্পর্কে লিখি। এইগুলা আমার ব্যাক্তিগত অনুসন্ধান।
নিজের সন্তান এর জন্য ভাল কিছু করার চিন্তা সবাই করে কিন্তু চাওয়া ,
পাওয়া আর বাস্তবে তা পরিণত করতে কিছু বিষয় জানা অত্যান্ত জরুরী।

পরিবেশ তৈরীর গুরুত্ত:

বাসায় একটা পরিবেশ তৈরী করে দেবার গুরুত্ব
অনেকেই ভাবতে পারেন স্কুলে বা মাদ্রাসায় যাবার পিছনে এর প্রয়জোনীয়তা কোথায়?
এইটা বুজাইতে আমি কিছু বাস্তব ঘটনা বলি হয়ত কিছুটা উপলদ্ধি করতে পারবেন।
আমি বাচ্চাকে কোথায় পড়াব তার জন্য একটা পরিবেশ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত।

ঘটনা এক :

অমুকের নরমাল ডেলিভারি হয়। প্রায় তিনদিন ব্যথা সহ্য করার পর।
তখনি ভদ্রমহিলা সিদ্ধান্ত নেন এই যাত্রায় বেঁচে গেলে বাচ্চাকে মাদ্রাসায় দিবেন।
কথা অনুযায়ী ঠিকি মাদ্রাসায় দিলেন। ছেলে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে।
বেশ খুশি বাবা মা।
নামাজ পড়ে। এইভাবে এস এস সি পাশ করল (দাখিল )।

কলেজে ভর্তি করার পর ঘটল বিপত্তি।
বিভিন্ন সমস্যায় পরে গেল পিতামাতা। ছেলে আর পায়জামা পাঞ্জাবি পড়বে না।
প্যান্ট শার্ট লাগবে। মাদ্রাসা ভাল লাগে না।
কলেজে পড়বে। এইবার একটা বাইক লাগবে। তারা তাই করল।
কিছুদিন পর জানা গেল নেশা করে। তারপর মেয়ের প্রেমে পড়া।
এইভাবে ৩/৪ বছর সমস্যার পর সমস্যার মুখোমুখি পিতামাতা।
বার বার ফেল করার পর আর পাশের মুখ দেখল না।
বর্তমানে বিয়া করে ছেলে আর পুত্র বধূর আর্থিক দায়িত্ত্ব নিষ্ঠার সাথে বাবা মা পালন করছেন।

আসেন বলি পরিবেশ এর কথা।

সন্তান নামাজী হবে সেই চিন্তা ছিল , আলেম হবে আশা ছিল।
অনেক সম্পদ তাদের আছে ,তাই ছেলে কর্ম কি করবে তা নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যথা ছিল না।
খুবি ক্ষীণ চিন্তা ভাবনা। যাক ছেলের বাবা ঘুষ খেত।
টাকার রোজগার যেমন আসত কম শ্রমে অধিক টাকা তাই সেই টাকা কিভাবে ব্যালেন্স করে চালাতে হবে সেই নলেজ ছিল না।
কিছু উদাহরণ দেই। বাবা সময়ে সময়ে নতুন গাড়ি কিনতো।
বাসায় কারণে অকারণে খাবার দাবারের আয়োজন ছিল।
প্রায় আয়োজন থাকে নামি বেনামি আত্মীস্বজনের আড্ডা।
নামাজ কালাম ছিল পড়ার জন্য পড়া কিন্তু আল্লাহভীতি ছিল না।

সন্তানের উপর প্রভাব :

ছেলে অনেকটা বছর বেশ ভাল নম্র ভদ্র ছিল।
নামাজও পড়ত মসজিদে গিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু অনেক বছর পরিবারের মানুষের এমন আচরণ দেখে দেখে বড় হয়ে মানুষিক ভাবে তৈরী হয়েই যায় যে ,নামাজ কালাম জীবনে এত গুরুত্ত নেই।
বাবার অনেক টাকা আছে তাই পড়াশুনার দরকার নাই।
নেশা করা ,নতুন নতুন বাইক কেনাও কোন অপরাধ না কারণ বাপ এমন করে ,দেখেই সে বড় হয়েছে।

বাস্তবতা :

আমরা যা দেখে দেখে বড় হই আমাদের শরীর মন তাই বিশ্বাস করতে শেখে।
বাইরের বিষয় আমাদের যতটা প্রভাব ফেলে পরিবারের মানুষের আচরণ অনেকটা চরিত্র গঠনে সাহায্য করে।
তাছাড়া বড় সমস্যা ছিল উপার্জনের টাকা হারাম ছিল।

ঘটনা দুই :

মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা সাধারণ চিত্র হল।
সংসার জীবনের প্রথম দিকে অনেক শ্রম করে।
এই সময়টাতে বড় সন্তান খুব একটা সুবিধা পায় না।
বাবা মায়ের কষ্টের একমাত্র সাক্ষী হয় ,সংসারের বড় সন্তান।
যাক এইবার বলি তমুকের কাহিনী।
তমুখের তিন সন্তান। বড় ছেলে টাকা পয়সার অভাবে স্কুলে যেতে পারেনি।
বাবার সাথে সংসারের আর্থিক জোগান এর চেষ্টায় বয়স শেষ।
দ্বিতীয় সন্তান কোন রকম স্কুল কলেজ পড়েছে। ছোট সন্তানকে নিয়ে বাবা মায়ের অনেক স্বপ্ন।
কারণ তারা এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল পরিবার।
কিন্তু শিক্ষায় কম। তাতে কি মূর্খ বাবা মাও চায় সন্তান অনেক পড়াশুনা করুক।
এর ওর কাছে খোঁজ নিয়ে জানল। ভাল স্কুল কোনটা?

খোঁজ খবরে বুজতে পারল ইংলিশ মিডিয়াম। যথারীতি কয়েকজন শিক্ষক এর প্রাইভেট এর ব্যবস্থা করা ,স্কুলে ভর্তি। সুন্দর ড্রেসআপ।
নতুন সাইকেল। ছেলে যাত্রা শুরু। বাবা মা অনেক খুশি। ছেলে সুন্দর করে কথা বলে। নম্র ভদ্র বলে গ্রামের সবাই।
খুব ভাল রেসাল্ট করে। বাবা মা মুখে খুশি আর মনে শান্তি নিয়ে পান চিবাতে চিবাতে ছোট ছেলের প্রশংসা করে বেড়ায়।
তারপর বিপত্তির আর শেষ নাই। কলেজ জীবনের শুরুতেই শুরু হল বাবা মায়ের যন্ত্রনা।
ছেলে বাসায় আসেনা। অধিক সময় বাইরে কাঠিয়ে দেয়।
তার হাত খরচের টাকা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। তাই দেখে বাকি দুই ভাই প্রায় অশান্তি বাসায়। সে এইভাবে সুজুগ নেয়।
আমরা কি পেয়েছি আপনাদের কাছে। তারা সংসার নিয়ে আলাদা হয়ে যায়। সম্পত্তির ভাগ চায়।
এইদিকে বাবা মা ছোট সন্তানের সাথে রাগ ক্ষোভ করে হাত খরচের টাকা বন্ধ করে দেয় ।
সে এখন টিউশনি করায়। হতাশ হয়ে যায় জীবনে। পড়াশুনা ,ক্যারিয়ার এখানেই সমাপ্তি।
কলেজ পাশের মুখ আর দেখল না।

আসেন বলি পরিবেশ এর কথা:

সাধারণত বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় ইংলিশ মিডিয়ামে যারা পড়াশুনা করে তাদের বাবা মা শিক্ষিত হয়।
তাদের পরিবেশ এবং জীবন যাত্রা স্বাভাবিক ভাবেই আলাদা হয়।
তমুখের সন্তান যখন স্কুলে যায় তার যে বন্ধু বান্ধব হয় তাদের বাসার পরিবেশ এর সাথে নিজের পরিবেশ মেলাতে পারে না।
সে অনেকের বাসায় যায় কিন্তু কাউকে বাসায় আনার আগেই তার মাথায় নিজের পরিবারের পরিবেশ এর কথা মাথায় আসে।
স্কুলে যে পরিবেশ পায় ,সে বাবা মা ভাই বোন কারো সাথেই আর এডজাস্ট করতে পারে না।
তার আবেগ অনুভূতির মূল্য কেউ বুজতে পারে না। ভাইদের ব্যবহারে সে ব্যথিত হয়।
কারণ তারা কম শিক্ষিত হলেও সে একটা ভাল পরিবেশে থেকে অনেক বল কিছু শিখেছে।
তাছাড়া দুনিয়াবী সম্পর্কে স্বার্থপরতা শেখার বা বুজতে পারার মত বয়স এখন হয়নি।
তার আগেই সে কষ্ট পায় পিতা মাতা এবং ভাইদের কাছে।

বাস্তবতা :

যখন সন্তান ইংলিশ মিডিয়ামে পরে সে স্বাভাবিক ভাবে মাঝে মাঝে ইংলিশে কথা বলবে।
তখন যদি বাসার মানুষও সেই ভাষায় রেস্পন্স করে তাহলে তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
সে ভাবতে শিখে আমি ভাল কিছু করছি ,সঠিক পথে হাটছি। একটা সন্তান যখন বড় হয় ,সে দুনিয়াকে বুজতে শিখে।
জানতে শিখে। অনেক প্রশ্ন মাথায় আসে।
তখন ওর আবেগ আর অনুভূতি বাবা মাকে বুজতে হয়।
যখন সে বাইরের পরিবেশ আর বাসার পরিবেশ এর মধ্যে বিন্দু পরিমান মিল খুঁজে না পায় ,তখন জীবন আর জিবীকা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে।
তাছাড়া বাড়তি বয়সের ছেলে মেয়েদের তো আরো কিছু সমস্যা থাকে।
সব মিলিয়ে ওরা একাই ম্যানেজ করতে পারে না। বাবা মা শুধু আর্থিক সাপোর্ট দিলেই হবে না।
এই সময় মানুষিক দিক বুজে এর সাপোর্টও দেওয়া খুব জরুরী।
বাবা মায়ের মত শিক্ষক আর বাসার মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কোথাও নেই।

ঘটনা তিন :

ভদ্র মহিলা আমল আখলাক করেন। কিন্তু স্বামীর ভিতর খুব একটা নেই।
নামাজ পড়েন কিন্তু একজন মুসলিম হিসাবে পড়তে হয় তাই পড়েন।
কিন্তু স্ত্রীর মনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ভয় কাজ করে। তাই তার পোশাক আসাক ।
সংসারের কাজ কর্মে শালীনতা বুজতে পারা যায়। ছয় সন্তানের জননী।
কাজের চাপে ,সংসারের দায়িত্বে কিভাবে চার্ জন্ বড় হয়ে যায় বুজতেই পারেন না।
বাকি দুজন ছেলেকে উনি মাদ্রাসায় দেন। উদ্দেশ্য আলেম বানাবেন। খুব কষ্ট করেন তাদের জন্য।
কিছু নমুনা বলি।
এই দুজন যেন নামাজ পরে ,তাই সে ভোর বেলা হারিকেন হাতে নিয়ে ছেলেদের নিয়ে মসজিদে যায়।
এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে সেইদিন সত্যি সত্যি ভাত দেয় না। একজন পরের বছরেই পালিয়ে যায়। মাদ্রাসা যাবে না।
স্কুলে পড়বে। আরেকজন যায়। গ্রাম থেকে শহরে এক মাদ্রাসায় ভর্তি করায়। তাকে নিয়েও বিশাল যুদ্ধ করেন।
প্রায় মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যাওয়া।
এইখানে পড়বে না ,সেখানে পড়বে।

মায়ের কঠিন যুদ্ধ ছেলে আলেম হবেই। বড় সন্তানকে টাকা দিয়ে আসতে বলে ,ছেলে অনীহা দেখায়।
মাসের বেতন ঠিক মত মাদ্রাসায় পৌঁছায় না। হুজুরের কথা। খাবারের কষ্ট থাকেই হোস্টেল জীবনে।
তখন মোবাইল ছিল না।
গ্রাম থেকে শহরে এসে নিয়মিত এইসব ফর্মালিটি করতে মায়ের আগ্রহ থাকলেও পরিবারের অন্নান্য সদস্যরা উদাসীন ছিল।
মাদ্রসা পাশ করে। পড়াশুনাও শেষ করে কিন্তু তেমন বড় কিছুই হতে পারে না।
একটা মসজিদে নামাজ পড়ায় সামান্য বেতনে সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। হুম মায়ের ইচ্ছা কিছুটা পূর্ণ হয়।

আসেন বলি পরিবেশ এর কথা:

এত বড় পরিবারের মধ্যে শুধুমাত্র মায়ের মধ্যে এই অনুভূতি ছিল।
এই জন্য ছেলেকে মা অনেক কষ্ট করেও খুব বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেনি।
কারণ অতিরিক্ত চাপে পড়ে ছেলে পড়াশুনা করেছে ঠিকই কিন্তু ভিতরে পড়াশুনার কোন আগ্রহ জন্মায় নি।
তাহলে একাডেমিক ডিগ্রি কোন কাজে আসবে না যদি মানুষ পড়াশুনা না করে।
কিন্তু তার পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকত নিজের ভিতর আত্মবিশ্বাস থাকত। সে আরো বড় আলেম হতে পারত।
বড় আলেম হতে অনেক পড়াশুনা করতে হয়। তার সেই আগ্রহ কাজ করেনাই।
সে পড়াশুনা বা আরো বড় ডিগ্রি নিলে তার কথায় অনেক মানুষের হেদায়েত হতে পারত।
সে গ্রামের মুয়াজ্জিন।
কারণ কোরআনে হাফেজ সাথে মাদ্রাসা থেকে মাস্টার্চ করা একজন ছেলে শুধু মুয়াজ্জিন।
কি আশা করা যায় ?

খুব কষ্ট করে যদি বাসায় একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করা যায় তাহলে সন্তানের পিছনে কোন শ্রম দিতে হবে না।
এমনি নিজের ইচ্ছায় সে সেই পথে হাটবে ইনশাল্লাহ। ধরেন একটা গাছ কিনে আনলাম।
গাছ বড় করে তুলতে চাইলে টবের মাটি তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা যদি গাছের জন্য উপযুক্ত মাটি তৈরী করতে পারি, ভাল মানের সার দিয়ে।
তাহলে গাছের জন্য শুধুমাত্র মাঝে মাঝে পানি দিলেই গাছ সুন্দর বড় হয়ে ফুল ফলে ভরিয়ে দিবে।
ঠিক তেমন সন্তান মানুষ করতে চাইলে বাসার পরিবেশ তৈরী করে দিলে ওরা এমনিতেই মানুষ হবে ইনশাল্লাহ।

পরিবেশ কিভাবে তৈরী করব ?

সন্তানকে যেমন দেখতে চাইছেন। যেভাবে তৈরী করতে চাইছেন।
যে পরিবেশে দিচ্ছেন। নিজেদের ভিতরেও সামান্য সেই অনুভূতি তৈরী করে নিতে হবে।
যেমন আলেম বানাতে চাইলে বাসায় বাবা মাকে নামাজী হতে হবে।
ভাল স্কুলে দিলে নিজেদেরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
অনেকেই বলতেই পারে খারাপ পরিবেশ থেকে কি কেউ মানুষ হয় না? হয়ত হয় সংখ্যায় খুব কম।
আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গী যদি সেই কমের দিকে হয় তাহলে হেরে যাবার সম্ভাবনায় বেশী।
গোবরে পদ্ধফুল বাস্তবে খুব কমেই ফোটে মনে হয় কিন্তু পানিতে রাখলে নিচ্ছয়তা আছে। ফুল ফুটবেই।

ads